Monday, September 22, 2025

জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা : জড়িতরা সেনাক্যাম্পে এসে বললেন ‘আর হবে না’

আরও পড়ুন

রংপুরে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়ি ‘দ্য স্কাই ভিউতে’ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত নেতাকর্মীদের নিয়ে সেনা ক্যাম্পে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও মহানগর বিএনপির নেতারা।

রোববার (১ জুন) রাত ৯টার দিকে রংপুর স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যান তারা। এ সময় সেখানে এক আলোচনায় ঘটনাটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর দাবি করেছেন দুই সংগঠনের নেতারা।

এ ঘটনায় জড়িত অঙ্গ সংগঠনের দুজন নেতা ‘সরি’ বলে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানান বিএনপির নেতারা। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না বলে সেনাবাহিনীকে প্রতিশ্রুতি দেন তারা।

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু ও সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন, মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি, সদস্য সচিব রহমত আলী, অব্যাহতি পাওয়া সাবেক মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন, সদস্য সচিব জামিল আহমেদসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য।

এর আগে গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির নেতাদের নেতৃত্বে জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। সে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করে সেনাবাহিনী। সে সময় যাদের হাতে লাঠিসোঁটা, ইট-পাথর ও দেশীয় অস্ত্র ছিল, তাদের নিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়।

আরও পড়ুনঃ  ঢাকা চাইলে হাসিনাকে হস্তান্তর করতে পারে দিল্লি

সেনা ক্যাম্পে উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘটনার নানা বিষয়ে আলোচনা করেন ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম।

আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এনসিপি ও বিএনপির প্রতিনিধিরা স্বপ্রণোদিত হয়ে এখানে এসেছেন। তাদের যেসব কর্মী ও সহযোদ্ধা আবেগী হোক বা যেকোনো কারণেই হোক, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিছু কর্মকাণ্ড করেছিল। আমরা তাদের চিহ্নিত করার সুযোগ দিয়েছিলাম। তারা নিজে থেকে এসেছেন। তারা এ রকম আর কিছু করবে না ভবিষ্যতে।

পরে তিনি উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির পক্ষে দুজন প্রতিনিধির কাছে তাদের বক্তব্য শুনতে চান।

তখন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু বলেন, দুদিন আগে রংপুরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের রংপুরের আসার প্রেক্ষিতে এবং তার বক্তব্য ও মহানগরীর সভাপতির (সাবেক মেয়র মোস্তফা) বক্তব্যের কারণে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। গতকাল আপনাদের সঙ্গে কথা বলার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আপনাদের সঙ্গে আমরা বসব। যারা ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে আমরা দেখেছি, তাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি ও বিএনপি নেতারা মিলে এখানে নিয়ে এসেছি।

আরও পড়ুনঃ  রাষ্ট্র আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় কি না, প্রশ্ন ব্যারিস্টার সুমনের

তিনি আরও বলেন, আমাদের পার্টির অঙ্গ সংগঠনের দুজন সদস্য এ ভুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি এবং তারা ‘সরি’ বলেছে। আমরা মনে করি তারা যেহেতু ভুল বুঝেছে, ভবিষ্যতে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটবে না। আমরা সবাই মিলে রংপুরকে একটি শান্তির রংপুর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করব।

আলোচনায় ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, গত ২৯ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল। জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসী বাহিনী এর ওপর হামলা চালায়। এর প্রেক্ষিতে পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ রকম একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনায় রংপুরে উত্তেজনা বিরাজ করে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের চিহ্নিত করতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ফ্যাসিস্টবিরোধী শক্তির পক্ষ থেকে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে এখানে এসেছি।

আরও পড়ুনঃ  শেখ হাসিনাকে বিশাল বড় সুখবর দিলো ভারত সরকার

যাদের চিহ্নিত করা গেছে যে যারা গাছের ডাল ভেঙ্গে হাতে নিয়েছে, অনেকে ইট হাতে নিয়েছিল সেই সময়ের প্রেক্ষিতে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে নিশ্চিত করেছি, এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রংপুরে যেন আর না হয়। এ জায়গা থেকে সচেতন থাকব। আর আমাদের ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম বলেন, যেটা নিয়মের মধ্যে পড়ে, তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সেভাবে চালিয়ে যাবেন। কিন্তু কোনো ধরনের ভাঙচুর, কোনো কিছু নষ্ট করা, মবের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে বাধা সৃষ্টি করা এসব কর্মকাণ্ড শুধু রংপুরে কেন, বাংলাদেশের কোথাও করার সুযোগ নেই।

জাতীয় পার্টিকে ডাকা হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আইডেন্টিফাই (চিহ্নিত) করতে পারিনি। আমরা যাদের ডেকেছি, ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে যাদের হাতে কিছু একটা পেয়েছি, যেটার মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করা যায়। এটা আমাদের কেউ প্রোভাইড (সরবরাহ) করেছে বা পেয়েছি এ জন্য চিহ্নিত করতে পেরেছি। এখন তাদের কিছু পেলে ওদের বিরুদ্ধেও করব।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ