মাঝরাতে আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অযাচিত সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একজন আইন উপদেষ্টা। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত বা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিক দায়ভার সরকারের হলেও অনেক সময় এককভাবে তাকেই দায়ী করা হচ্ছে, যা অনুচিত।
বুধবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায়ন বিষয়ক ভুল তথ্যের কারণে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, যার ফলে তার পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন। কিছু সমালোচক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, “কীভাবে এই আইন করলাম আমি!” তারা দাবি করেছেন যে, এটি তো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাজ। কিন্তু তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আইনটিতে তো লেখা আছে আইন মন্ত্রণালয়ের নাম।”
আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি জানি, সমাজে বহু শিক্ষিত মানুষ আছে। তাদের কাছে সবিনয়ে বলি, অন্য যে কোনো মন্ত্রণালয় যে অধ্যাদেশই করুক না কেন, তা জারি করতে হয় আইন মন্ত্রণালয়কে। আমাদের রুলস অব বিজনেস অনুসারে এটাই বিধান।” তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে এনবিআর নিয়ে যে আইন হয়েছে, তা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হওয়ার পর এটা জারি করতে হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়কে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আইন মন্ত্রণালয় নিজস্ব উদ্যোগে আইন করেছে কেবল এ মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধিভুক্ত বিষয়ে। যেমন, দেওয়ানি কার্যবিধির সংশোধনী আইন বা উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত আইনটি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধিভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের কোনো ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয়ের নেই।”
আইন উপদেষ্টা হিসেবে তার সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আইন তো তবু কিছুটা খটমটে বিষয়। কিন্তু সাদামাটা, সহজবোধ্য যে কোনো বিষয়েও আমাকে নিন্দা করার প্রবণতা আছে সমাজের কিছু মানুষের মধ্যে।” তিনি প্রশ্ন করেন, “সরকারের যেকোনো কাজের জন্য সমালোচনা যদি আমাকে করা হয়, তাহলে যেকোনো ভালো কাজের জন্য প্রশংসাও আমাকে কেন করা হয় না?”
তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “সাবেক রাষ্ট্রপতি কীভাবে বিদেশে গেলেন এই দায় যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে আমাকে দেওয়া হয়, তাহলে দ্রব্যমূল্য যে স্থির রয়েছে, এই প্রশংসাও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে আমাকে দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার কাজের জন্য নিন্দা বা প্রশংসা আমাকে করবেন, অন্যর কাজের জন্য অন্যকে। যে কোনো কাজের সামগ্রিক দায়দায়িত্ব আমাদের গোটা সরকারের। কিন্তু যদি নির্দিষ্টভাবে একজন উপদেষ্টাকে দায়ী করা হয় তাহলে সেটি শুধু তার মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত বিষয়ে করা উচিত।”
সমালোচকদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান, “যারা নিন্দা করেন, কুৎসা রটান, এ রমধ্যে হয়তো কোনো আনন্দ খুঁজে পান। কিন্তু, এটা অন্য কাউকে এমন কষ্ট দিতে পারে, যা আপনি নিজে কখনও বহন করতে চাইবেন না। এটি মনে রাখা ভালো।”
তিনি আরও বলেন, “আমি জানি ‘অপরের মুখ ম্লান ক’রে দেয়া ছাড়া প্রিয় সাধ নেই’- এমন মানুষ আছে সমাজে। যারা এমন না, তাদের কাছে অনুরোধ, কারও নিন্দা করার আগে একটু জেনে নিন। আল্লাহ আছেন, আমাদের সবাইকে একদিন জবাব দিতে হবে।”