Saturday, March 15, 2025

ঢাকায় পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ছবিটি সরানোর কারণ স্পষ্ট করল ভারত

আরও পড়ুন

একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে ঢাকায় ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজী, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ। যৌথবাহিনীর পক্ষে ছিলেন মেজর জেনারেল জেএফআর জ্যাকব, মেজর জেনারেল গন্ধর্ভ সিং নাগরা ও কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার কাদের সিদ্দিকী। দলিলে পাকিস্তানি নৌ-পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডার রিয়ার-অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শরিফ, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় বিমান বাহিনীর কমান্ডার এয়ার ভাইস-মার্শাল প্যাট্রিক ডেসমন্ড কালাঘানও সই করেন।

পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের নথিতে সইয়ের সেই ঐতিহাসিক ছবিটি ভারতের কাছে আলাদাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে এই ছবিটিকে ‘সবচেয়ে বড় সামরিক বিজয়ের’ প্রতীক হিসেবে দেখছে ভারতীয়রা। তবে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ছবিটি সেনাপ্রধানের কার্যালয় থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।

আরও পড়ুনঃ  ‘সং*স্কার কার্যক্রম বাস্ত*বায়নের পরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিতে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই ঘটনার প্রায় এক মাস পর মঙ্গলবার ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী ছবিটি সরিয়ে নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন।

জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, ‘ভারতের গৌরবময় ইতিহাসের তিনটি অধ্যায় রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ব্রিটিশ যুগ, মুঘল যুগ এবং তার আগের সময়। সশস্ত্র বাহিনীর দর্শনের সঙ্গে ঐতিহাসিক সংযোগ তৈরি করতে আগের ছবিটি সরানো হয়েছে।’

সেখানে নতুন যে চিত্রকর্মটি বসানো হয়েছে সেটির নাম ‘ফিল্ড অব ডিডস’ বা ‘করম ক্ষেত্র’। যার অর্থ ‘কর্মভূমি’। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি সশস্ত্র বাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। এই চিত্রকর্মটি সশস্ত্র বাহিনীকে ধর্মের রক্ষক, জাতির মূল্যবোধের রক্ষক এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত একটি একীভূত বাহিনী হিসেবে তুলে ধরে।

নতুন এই চিত্রকর্মটি এঁকেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২৮ মাদ্রাজ রেজিমেন্টের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল থমাস জ্যাকব।

চিত্রটির ব্যাকগ্রাউন্ডে তুষারে ঢাকা পাহাড়, ডান দিকে লাদাখের প্যাংগং লেক এবং বাঁ দিকে (হিন্দু পুরাণে উল্লেখিত পক্ষীশ্রেষ্ঠ ও বিষ্ণুর বাহন) কৃষ্ণের রথ এবং মধ্যখানে রণকৌশলের দিকপাল চাণক্যের (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ে প্রাচীন ভারতের এক দিকপাল) সরব উপস্থিতি রয়েছে। পাশাপাশি, আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম যেমন ট্যাংক, অল-টেরেইন ভেহিকল, পেট্রল বোট, দেশীয় লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার এবং অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টারের চিত্রও প্রদর্শিত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সীমান্তে আটক ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তা, নেপথ্যে যা জানা গেল

ভারতের সেনাপ্রধানের মতে, নতুন চিত্রকর্মটি সশস্ত্র বাহিনীর (সেনাবাহিনী) অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে সংযুক্ত করার প্রতীক। তবে নতুন চিত্রকর্মে প্যাংগং লেকের তীরে ‘অর্ধবস্ত্র-পরিহিত’ এক ব্রাহ্মণের চিত্র নিয়ে বেশ সমালোচনাও হয়েছে। এ বিষয়ে জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, ‘যদি ভারতীয়রা চাণক্যকে না চিনেন, তবে তাদের উচিত নিজেদের সভ্যতার ইতিহাস খুঁজে দেখা এবং জানা।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন চিত্রকর্মটি বর্তমান বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে আঁকা হয়েছে। বিশেষত ভারতের উত্তর দিক (চীন) থেকে আসা চ্যালেঞ্জের জন্য সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির প্রতিফলন এটি।’

আরও পড়ুনঃ  এক মাসের মধ্যে ঘুষের টাকা ফেরত দিতে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর

সেনাপ্রধান দ্বিবেদী স্পষ্ট করেন যে, এটি ১৯৭১ সালের ছবিটি (চিত্রকর্ম) সরিয়ে দেয়ার বিষয় নয়। তিনি বলেন, ‘সেনাপ্রধানের দুটি লাউঞ্জ রয়েছে। আত্মসমর্পণের চিত্রটি মানেকশ সেন্টারের লাউঞ্জে রয়েছে।’

উল্লেখ্য, ভারতের সেনাপ্রধানের লাউঞ্জে যে ছবিটি আগে টাঙানো ছিল সেটির পটভূমি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের। ঐতিহাসিক ছবিটিতে দেখা যায়, পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছেন। তার পাশে বসা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ও বাংলাদেশ–ভারত যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের কমান্ডার এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার, ভাইস অ্যাডমিরাল কৃষ্ণন, এয়ার মার্শাল দেওয়ান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্বাগত সিং এবং মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ