আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং দেশের রাজনৈতিক নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এই তথ্য জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বুধবার (১১ জুন) লন্ডনের চ্যাথাম হাউসে এক আলাপচারিতায় এই বিষয়টি তুলে ধরেন।
আলাপচারিতায়, চ্যাথাম হাউসের পরিচালক ব্রনওয়ে ম্যাডক্সের সঞ্চালনায়, প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিতের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “আমরা নিরাপদ বোধ করি না; তারা রাস্তায় বিক্ষোভ করে, লোকজনকে হুমকি দেয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে যতক্ষণ না বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ড. ইউনূস বলেন, “এটি একটি বিতর্ক। বিতর্ক হলো আওয়ামী লীগ কি রাজনৈতিক দল? যদি তারা রাস্তায় এভাবে তরুণদের হত্যা করতে পারে, এভাবে মানুষকে গুম করতে পারে, এভাবে টাকা চুরি করতে পারে, আমরা কি তখনো এটিকে রাজনৈতিক দল বলব?” তিনি বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার প্রস্থানের পর এটি শেষ হবে। এখন এটি একটি নতুন দেশ, যেখানে তারা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “যারা পালিয়ে গেছে, তাদের জন্য এটা শেষ হয়নি। অনুপস্থিত থেকেও অন্য দেশ থেকে একইভাবে কাজ চালিয়ে গেছে, মানুষকে উসকানি দিচ্ছে, রাস্তায় সংঘর্ষ করছে।” তিনি উল্লেখ করেন যে, আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে কেউই দোষ স্বীকার করেনি বা অনুশোচনা প্রকাশ করেনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা জাতি হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।” তিনি এই সিদ্ধান্তের পেছনে দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
এছাড়া, সঞ্চালক প্রশ্ন করেন কেন বিচারের বিষয়টি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না। ড. ইউনূসের জবাব ছিল, “আমি এই সিদ্ধান্ত নিইনি। যারা আমাদের দায়িত্ব নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, তারাই আমাদের এ কাজটি দিয়েছে।”
নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সঞ্চালক বলেন, অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। ড. ইউনূস এর জবাবে বলেন, “এটা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের জন্য ভোট হবে এবং পুরোনো বাংলাদেশকে বিদায় জানিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চান।
সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন–পীড়নের বিষয়ে সঞ্চালক প্রশ্ন করেন। ড. ইউনূস বলেন, “এটা সত্যি নয়। তাদের জীবনে এত স্বাধীনতা কখনো ছিল না। তারা যা খুশি বলতে পারছে।”