Monday, September 22, 2025

হিতে বিপরীত ইসরায়েলের হামলা, পরমাণু বোমাতেই এবার চূড়ান্ত সমাধান দেখছে ইরান

আরও পড়ুন

ইসরায়েলি হামলায় ইরানের নিজস্ব এবং মিত্র সামরিক কমান্ডারের মৃত্যু এবং হিজবুল্লাহর নেতৃত্বের সংকট; প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েলের ওপর তেহরানের তাৎক্ষণিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, যাতে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত ছিল বলে দাবি ইসরায়েলের। এসবই ইরানের জন্য যেন একের পর এক ধাক্কা।

সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকরা উদ্বিগ্ন যে, ইরানের প্রথাগত এমন ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিতে পারছে না দেশটি। তারা পরমাণু বোমা তৈরিকেই চূড়ান্ত সমাধান মনে করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের পর্যালোচনা অনুসারে, ২০১৮ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করার পর থেকে ইরান পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জনের আরও কাছাকাছি চলে যায়।

বর্তমানে অস্ত্রায়নের দিকে অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও ইরান তার প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে (ডেটার) তার সম্ভাব্য পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার বাড়াতে ইচ্ছুক হতে পারে। এক্ষেত্রে তেহরান ইসরায়েলি নেতাদের মনে এমন বার্তা দিতে চাইছে। তারা যেন ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া জানাতে কয়েক ধাপে চিন্তা করে।

আরও পড়ুনঃ  কক্সবাজারে লাইটার ট্রেনের ইঞ্জিন বগির ধাক্কায় অসহায় ১ কৃষকের মৃত্যু

মঙ্গলবারের হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ‘ইরান আজ রাতে একটি বড় ভুল করেছে এবং তারা এর মাশুল দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ইরানের সরকার আমাদের (ইসরায়েলের) আত্মরক্ষার অধিকার এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমাদের সংকল্প-সক্ষমতা স্বীকার করতে চায় না।’

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তেল আবিবের আকাশে আলোকিত ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ভিডিওগুলো কয়েকদিন ধরে টানা চালানো হয়। তবে যে ধরনের প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্রগুলো তেহরান আসলে তৈরি করেছে সেগুলো আদতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতে ব্যাপকমাত্রায় ক্ষতি করতে ব্যর্থ।

তেহরানে জুমার নামাজের নেতৃত্ব দেয়ার সময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রসঙ্গে বলেন, হামলাটি ছিল ‘অসাধারণ’, ‘আইনি’ এবং ‘বৈধ’। কিন্তু তার বক্তব্যে নরম সুরও শোনা যায়। তিনি ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেন। বিশেষ করে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর হত্যা, যাকে তিনি ‘ভাই’ এবং “লেবাননের উজ্জ্বল রত্ন’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  সালাহউদ্দিন ও খোকনকে বিএনপির শোকজ

খামেনিয়ে প্রতিশ্রুতি দেন, প্রতিরোধের জন্য ইরানের সমর্থন অটুট ছিল এবং দেশটির মিত্রদের (প্রতিরোধ যোদ্ধাদের) প্রতিরক্ষা বেষ্টনী মজবুত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইরান আমাদের দায়িত্ব পালনে দেরি করবে না বা তাড়াহুড়া করবে না।

ইরানের প্রতিরক্ষামূলক আচরণের সুযোগ নেয় ইসরায়েল। গত বছর ধরে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল,ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেছে এবং সম্প্রতি লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপর আক্রমণ শাণিত করেছে।

হিজবুল্লাহ, হামাস এবং হুতিসহ ইরাক এবং সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সঙ্গে নিয়ে তৈরি ইরানের ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ মূলত তেহরানকে আঞ্চলিক হুমকি থেকে সুরক্ষিত রাখে।

এ প্রসঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ এবং ওয়াশিংটনের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড আলব্রাইট বলেন, ‘যদি প্রতিরোধের এই অক্ষ কাজ না করে তবে একমাত্র প্রতিরোধ হতে পারে পারমাণবিক প্রতিরোধক।’

আরও পড়ুনঃ  ‘অস্ত্রোপচার’ হচ্ছে ৯ ব্যাংকের, প্রথমেই ইসলামী ব্যাংক

তিনি বলেন, হামাস এবং হিজবুল্লাহর শক্তি ক্ষয়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধনে ব্যর্থতা এগুলো পরবর্তীতে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে এবং ভাল সুযোগ করে দিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে ইরানের বিশেষজ্ঞ এবং জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার সিনা আজোদি বলেন, ‘হিজবুল্লাহর ক্ষতি ইরানকে বিধ্বংসী হয়ে উঠতে বাধ্য করেছে। আপনি যখন দাবা বোর্ডের কথা ভাবেন, তখন বুঝতে পারবেন হিজবুল্লাহ হচ্ছে ইরানের কাছে রানীর মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ। এটি ইরানের তৈরি করা সবচেয়ে সফল মিলিশিয়া/ সশস্ত্র বাহিনী। হিজবুল্লাহর অধঃপতন ইরানকে শক্রপক্ষ বিশেষ করে ইসরায়েলের সামনে উন্মোচিত করে দিয়েছে। এতে করে এই অঞ্চলে ইসরায়েল আরও স্বাধীনভাবে যা ইচ্ছা তা করে যাচ্ছে,’ আজোদি বলেন। প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্যা ওয়াশিংটন পোস্টে সম্পূর্ণ নিবন্ধটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ